এইচআইভি ভাইরাসের সেরা চিকিৎসা পদ্ধতি

প্রচ্ছদ » Uncategorized » এইচআইভি ভাইরাসের সেরা চিকিৎসা পদ্ধতি

পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ভাইরাস শণাক্তরণের এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা ভাইরাসটির লুকানো স্থানও শণাক্ত করতে পারবে। এটিই এযাবতকালের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা এইচআইভি ভাইরাস শণাক্তরণের সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি বলে দাবি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের।

এইচআইভি ভাইরাস এর একটি কুখ্যাতি রয়েছে যে, এরা ইমিউন কোষে এমন সুপ্ত অবস্থায় থাকে যে, সবচেয়ে উন্নত ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি ব্যবহার করেও এদের শণাক্ত করা যায় না। এতদিন পর্যন্ত এমন কোনো পরীক্ষা ছিল না যার মাধ্যমে শণাক্ত করা যাবে যে, ভাইরাসটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে কিনা।

কিন্তু পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রতিবেদনে দাবি করেছেন যে তারা এ বিষয়ে সাফল্য পেয়েছেন।

‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে দলটি ঘোষণা করেছে যে তারা ‘লুকানো’ এইচআইভি শণাক্ত করতে যথেষ্ট সংবেদনশীল একটি পরীক্ষা তৈরি করেছে। তারা দাবি করেন, তাদের আবিষ্কৃত নতুন এই পদ্ধতিটি দ্রুত কার্যকরী, অপেক্ষাকৃত কম শ্রম নির্ভর এবং বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষার চেয়ে কম ব্যয়বহুল।

ট্রায়াল চলাকালে পিটসবার্গের নতুন এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, এইচআইভির প্রায় নিরাময়যোগ্য ভাইরাস মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় লুকিয়ে রয়েছে, যা অনুমানের তুলনায় প্রায় ৭০ গুণ বেশি।

পিট পাবলিক হেলথের ইনফেকটিয়াস ডিজিস অ্যান্ড মাইক্রোবাইলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও ভাইস চেয়ারম্যান ড. ফাল্গুনী গুপ্ত বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এইচআইভি রোগীদের এই সুপ্ত ভাইরাস নির্মূল করার উপায় খুঁজে বের করার যথেষ্ট প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে এটি সঠিকভাবে নিরাময় হয়েছে কিনা ডাক্তারদেরকে তা নিশ্চিত করে বলার জন্য এতদিন যথেষ্ট সংবেদনশীল ও ব্যবহারিক কোনো পরীক্ষা ছিল না।’

এইচআইভি সিডি৪ প্লাস টি কোষকে সংক্রমিত করার মাধ্যমে শরীরে ছড়ায় যা এক প্রকার শ্বেত রক্তের কোষ। এই কোষই মূলত শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে।

এইচআইভির চিকিৎসার অ্যান্টিরোট্রোভালাল থেরাপিগুলো এমন এক স্তরে উন্নত হয়েছে যে, এইচআইভি সংক্রমক ভাইরাস এখন এত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত করা যায় যে, প্রতি মিলিয়ন সিডি৪ প্লাস টি কোষে একটির বেশি সংক্রমক ভাইরাস থাকতে পারে না।

কিন্তু যখন এই এইচআইভি থেরাপির কাজ চলে তখন এইচআইভি ডিএনএ প্রকৃতপক্ষে অধিকতর ভাইরাস তৈরি করেছে কিনা এবং থেরাপি থামিয়ে দেওয়া হলে ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের পুনরুত্থান ঘটবে কিনা পরীক্ষা দ্বারা তা শণাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এক্ষেত্রে শণাক্তকরণের জন্য আবিষ্কৃত আগের পরীক্ষাটিতে অনেকগুলো দূর্বলতা ছিল। এটি প্রচ্ছন্ন এইচআইভি ভাইরাসের আকার এর শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিতে পারত। এছাড়া এই পরীক্ষা করতে একটি বৃহৎ পরিমাণের রক্ত প্রয়োজন হতো। অনেক শ্রম এবং সময়েরও প্রয়োজন হতো এবং অনেক ব্যয়বহুলও ছিল।

ডা. গুপ্তদের দলটি কর্তৃক আবিষ্কৃত নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিটির নাম দেয়া হয়েছে ‘টিজেডএ’। এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিন শণাক্ত করার মাধ্যমে এই পদ্ধতিটি কাজ করে।

‘টিজেডএ’ পরীক্ষায় এক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল জানা যায় যেখানে আগের ‘কিউ-ভিওএ’ পরীক্ষায় ফলাফল পেতে দুই সপ্তাহ লাগত। এর খরচও আগেরটির এক তৃতীয়াংশ। এটিতে রক্তও অনেক কম লাগে।

ডা. গুপ্তা বলেন, ‘এই পরীক্ষার সাহায্যে আমরা দেখিয়েছি যে, অ্যান্ট্রোট্রোভাইরাল থেরাপির পরেও অ্যান্টিগ্রাফিটি রোগীর শরীরে আগের অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি এইচআইভি জীবাণু থাকতে পারে, যা কিউ-ভিওএ পরীক্ষার তুলনায় ৭০ গুণ বেশি।

এটিকে এইচআইভির সেরা পরীক্ষা হিসেবে দাবী করা হয়েছে। লুকানো এইচআইভি ভাইরাস শণাক্তের এই চিকিৎসা পদ্ধতি, এইডস প্রতিকারের কাছাকাছি বিজ্ঞানীদের নিয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *