জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিপিসি
প্রচ্ছদ » Uncategorized » জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিপিসিনিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে চায়। বিপিসির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের ‘টেকসই দর বৃদ্ধির’ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠানো ওই প্রস্তাবনায় প্রতি লিটার ফার্নেশ অয়েলের দাম ৩১ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৫ টাকা ও প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম ১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে এই প্রস্তাবনায় পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিপিসি সূত্র।
সূত্র বলছে, বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি বিপিসির নেওয়া ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহের জন্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিপিসি।
কয়েকদিন আগে বিপিসি জানায়, ২০১৭ সালে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৫ টাকা ২৪ পয়সা ও কেরোসিনের দাম ৪ টাকা ৭৪ পয়সা কমানোর পরে এখন পর্যন্ত প্রতি লিটারে গড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান গুণতে হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লাভে থাকা বিপিসি ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে লোকসানের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে বিপিসি জানায়,২০১৮ এর জানুয়ারি মাসের আগের তিন মাসে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার লোকসান করেছে তারা।
সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানার, এই ক্ষতির হার দিনে দিনে বাড়ছে। হিসাব অনুসারে বর্তমানে দিনে ১০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে বিপিসিকে।
দুই বছরের টানা পতনের পরে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এসে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করে। তেল উৎপাদনকারী দেশেগুলো তেল উত্তোলন কমিয়ে আনলে এই দর বৃদ্ধি শুরু হয়।
২০১৬ সালে যেখানে অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৩০ ডলার সেখানে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এস তা ৪৭ ডলারে পৌঁছায়। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে এই তেলের দাম ব্যারেল প্রতি দাঁড়ায় ৭১ ডলারে।
তবে সূত্রমতে, জুন-জুলাই সময় থেকে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করলেও বিপিসির লোকসান শুরু হয় তারও চার মাস পর থেকে। কারণ ওই সময় থেকে বিশ্ব বাজার থেকে বেশি দাম তেল কিনে দেশের বাজারের তা কম দামে বিক্রি করছে বিপিসি।
এই মুহূর্তে যদি বিশ্ব বাজারের তেলের দাম না কমে বা আমাদের দেশে তেলের দাম সমন্বয় না করা হয় তবে বিপিসিকে আরও লোকসান গুণতে হবে বলে উল্লেখ করেন সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এমনিতেই আমদানিকরা তেলের ওপর সরকারকে ৩১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তার ওপর বিশ্ব বাজারের তেলের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় তেলের আমদানি মূল্যই দাঁড়াচ্ছে খুচরা দামের বেশি।
এছাড়া আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার প্রভাবও আছে লোকসানে।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে যদি এক লিটার ডিজেলের দাম ১০০ টাকা হয় তবে সেই তেল খুচরা বিক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বিপিসির খরচ হয় কমপক্ষে ১৩৫ টাকা।
তার দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে বিপিসি যেখানে প্রতি ব্যারেল ডিসেল ৫০ ডলার ৩১ সেন্টে আমদানি করেছে সেখানে চলতি জানুয়ারি মাসে প্রতি ব্যারেলের জন্য গুণতে হচ্ছে ৮২ ডলার ১০ সেন্ট।
আর আমদানি করা প্রতি ব্যারেল ফার্নেস অয়েলের দাম ২০১৬ সালের এপ্রিলে ২১৬ ডলার থাকলেও ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তা ৪১২ ডলার ৪১ সেন্টে দাঁড়িয়েছে।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত ক্রুড অয়েলের আমদানি মূল্য ছিল ৪৩ ডলার ১৭ সেন্ট আর কেরোসিনের দাম ছিল ৫৩ ডলার ২৯ সেন্ট। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৫ ডলার ৪৯ সেন্ট ও ৮২ ডলার ৯৯ সেন্ট।
বিপিসির হিসাব মতে, ২০১৭ সালের প্রথম ১০ মাসে অর্থাৎ ওই বছরের জানুয়ারি- অক্টোবর সময়ে বিপিসির লাভ হয় ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৬ অর্থবছরের লাভ হয় ৯ হাজার ৪০ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয় ৪১৩ কোটি টাকা।