‘পোশাক নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছেন ক্রেতারা’
প্রচ্ছদ » Uncategorized » ‘পোশাক নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছেন ক্রেতারা’নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশি বায়াররা (ক্রেতা) বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশ থেকে ৫ মার্কিন ডলারে পণ্য কিনে ২০ ডলার লাভে তা ২৫ ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি; কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায়- তা নিয়ে কারো কোনো কথা নেই। এছাড়া রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও শ্রমিকদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। এমনকি তৈরি পোশাকের দামও বাড়ায়নি।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া গ্রান্ড হলে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামাজিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ৫ মার্কিন ডলারে পণ্য কিনে তা ২৫ ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি; কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায়- তা নিয়ে কারো কোনো কথা নেই।
রেহমান সোবহান বলেন, দেশের মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় থাকলে রানা প্লাজার মতো এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। ওই দুর্ঘটনার পর সামাজিক জবাবদিহিতার চরম অভাবের বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। জনপ্রতিনিধিও এ ঘটনার পর্যালোচনা করেননি।
সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, গত ৪ বছরে সংস্কারে প্রচুর ঘাটতি ছিল। শুধু নীতিকথা বললেই হবে না, সংস্কার করতে হবে। ক্রেতা, উদ্যোক্তা ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের সমতা দরকার। সরকারের সুশাসনে (গর্ভনেন্স সিস্টেম) দুর্বলতা রয়েছে।
সিপিডির সম্মানীত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রানা প্লাজা ধসের পরে বেশকিছু উদ্যোক্তা ব্যবসা ছেড়েছেন। এই ঘটনার পর ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল- তা হয়নি। দেশে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কার্যকারিতা কম।
তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি; তাদের পুনর্বাসনও হয়নি।
শ্রম সচিব মিকাইল সিপার বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর সরকার যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। ভবিষ্যতে শ্রমিকদের উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট সরকার।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, গার্মেন্টসের মোট শ্রমিক সংখ্যা কত- তা আমরা এখনও জানি না। গত ৮ মাস ধরে বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১১ লাখ শ্রমিক এর আওতায় এসেছে।
শ্রমিক নেতাদের ট্রেড ইউনিয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতে এখন পর্যন্ত ৫৯১টি ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অথচ এসব কারখানার মধ্যে মাত্র ২৬০টি কারখানা চালু রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হলো আমরা আইন মানছি কি না?
পোশাকের দামের বিষয়ে মাহমুদ হাসান বলেন, বিদেশে ক্রেতারা তাদের ব্যবসা দেখবে; দাম বাড়ানোর চাপ দিলে তারা ইথিওপিয়া বা পার্শবর্তী দেশ ভারতে চলে যাবে। গার্মেন্টস খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে ভারত- বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। গার্মেন্টস পরিদর্শন বাড়িয়ে দিয়েছি। শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।
শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিদেশি সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণের একটি প্যাকেজ পেয়েছি। আইনানুগ কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। স্পেকটার্ম গার্মেন্টস দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলেও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত ৪ বছরে শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি।
শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, যারা মরে গেছে তারা বেঁচে গেছে। যারা বেছে আছে তাদের নিয়ে শুধু আলাপ-আলোচনা হয়; আর কিছুই না। যতটুকু হয়েছে বিদেশিদের চাপেই হয়েছে। সরকার মন থেকে কিছু করেনি। উল্টো সামাজিক সংলাপের নামে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রমিক নেত্রী নাজমা বেগম বলেন, সব প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ভরে গেছে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না। সামনে জিএসপি ইস্যু কীভাবে রিকভারি করবো- সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন, অনেক শ্রমিক এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা কাজে যোগ দিতে ভয় পান; এমনকি বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেও ভয় পান। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে সাড়ে ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। আর ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়েছেন। তাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। ক্ষতিপূরণের কোনো মানদণ্ডও নেই।
বাংলাদেশি পোশাকের ন্যায্যমূল্য দাবি করে শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জিএসপি চলে গেলে বাংলাদেশের পোশাকের কী অবস্থা হবে- সেটা ভাবা দরকার।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।