প্যারাডাইস পেপার্সে মুসা বিন শমসের সহ ২০ বাংলাদেশি
প্রচ্ছদ » Breaking News || Slider || অর্থনীতি » প্যারাডাইস পেপার্সে মুসা বিন শমসের সহ ২০ বাংলাদেশি
পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারির নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংগঠন-আইসিআইজে। ২ লাখ ৯০ হাজার জনের ওই তালিকায় অন্তত ২০ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। তালিকায় প্রথমবারের মতো এসেছে ধনকুবের ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের নাম।
প্রায় ২০ বাংলাদেশি ‘কর স্বর্গ’ ইউরোপিয় দেশ মাল্টায় অফসোর কোম্পানি খুলেছে। মাল্টায় মুসা বিন শমসেরের নামে নিবন্ধিত রয়েছে ভেনাস ওভারসিজ হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি অফশোর কোম্পানি। সেখানে বাংলাদেশের নিবন্ধিত বেশিরভাগ অফসোর কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ শিপিং, জ্বালানি ও টেক্সটাইল ক্ষেত্রের।
আইসিআইজি এ তালিকা প্রকাশ করে গত বুধবার। তবে বাংলাদেশের কত পরিমাণ টাকা মাল্টা বা বিশ্বের অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে সে অর্থের পরিমাণ জানায়নি। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী এসব বাংলাদেশের নিবন্ধিত অফসোর কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গেল বছরের ৬ই নভেম্বর অর্থ কেলেঙ্কারির ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দেয় আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন- ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। এরআগে প্রথম ধাপের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জ্যাস্টিন ট্রুডো, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও পপ তারকা শাকিরাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নাম। যার ধাক্কা এখনো সামালে দিতে পারেনি অনেক দেশ।
প্যারাডাইস পেপার্স নামের ওই অর্থ কেলেঙ্কারির রিপোর্ট যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে তথ্য প্রকাশ করছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এ সংগঠন।এর আগে প্যারাডাইস পেপার্সে ফাঁস হয় বাংলাদেশের আব্দুল আওয়াল মিন্টুসহ তার পরিবারের ১১ জনের নাম।
এবার প্রথমবারের মতো এলো বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমশেরের নাম। নতুন নথিতে বলা হয়, ২০১০ সালে মাল্টায় তার নামে নিবন্ধিত হয় ভেনাস ওভারসিজ নামে একটি কোম্পানি। তালিকায় এ কোম্পানির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ২৭, গর্গনেট স্ট্রিট, মোস্টা, মাল্টা।
মুসা ইব্রাহিমসহ প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৪ জন, সাভার ইপিজেডের ২ জন, নারায়ণগঞ্জের ৩ জন ও চট্টগ্রামের ২ জনের নাম রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বাংলাদেশিরা বিদেশি ঠিকানা ব্যবহার করে মাল্টায় অফসোর কোম্পানি রেজিস্টার করেছেন।
প্যারাডাইস পেপার্সে নাম থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ধানমণ্ডির ৩ নম্বর রোডের ১৩২ নম্বর বাসার জুলফিকার আহমেদ। তিনি মাল্টায় ১৯৯৯ সালে নিবন্ধিত খালেদা শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার। সাভারে অবস্থিত ঢাকা ইপিজেডের ব্যবসায়ী শাহনাজ হুদা রাজ্জাক মাল্টায় ২০০১ সালে ওশেন আইস শিপিং কোম্পানি লিমিটেড ও সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানি লিমিটেড নামে ২টি কোম্পানি নিবন্ধন করান। তবে কোম্পানি ২টি এখন বিলুপ্তির পথে বলে প্যারাডাইস পেপারসে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে মাল্টায় নিবন্ধিত প্রিয়াম শিপিং লিমিটেডের পরিচালকও শাহনাজ হুদা রাজ্জাক।
ঢাকা ইপিজেডের ব্যবসায়ী ইমরান রহমান বাংলাদেশি পরিচয় ব্যবহার করে শাহনাজ হুদা রাজ্জাকের সঙ্গে ওশেন আইস শিপিং কোম্পানি লিমিটেড ও সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানির পরিচালক হয়েছেন। শাহনাজ হুদার সঙ্গেই তিনি প্রিয়াম শিপিংয়ের পরিচালক হয়েছেন। অর্থাৎ এই তিনটি কোম্পানি শাহনাজ হুদা ও ইমরান রহমান বিনিয়োগ করে গড়ে তুলেছেন।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার ৩১ নম্বর বালুর মাঠের ঠিকানা ব্যবহার করে মাল্টায় ২০০৯ সালে গেক্সিমকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে কোম্পানি খুলেছেন তাজুল ইসলাম তাজন ও তুহীন ইসলাম সুমন। তারা দুজনই কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার আজমিরীবাগ এলাকার ফারুক পালোয়ানও গেক্সিমকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক।
বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসের ৬ নম্বর সড়কের ৮৭/এ ঠিকানা ব্যবহার করে ২০০৩ সালে মাল্টায় নিবন্ধিত কোম্পানি সেলকন শিপিং কম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন মাহতাবা রহমান। আর বারিধারা ডিওএইচএসের ৭ নম্বর সড়কের ৪২৪ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছেন মো. ফজলে এলাহী চৌধুরী। মাল্টায় ২০১৬ সালে নিবন্ধিত ডায়নামিক এনার্জির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার তিনি।
ধানমণ্ডির ১৪ নম্বর সড়কের ১১/এ ঠিকানার কে এইচ আসাদুল ইসলাম নামের একজন মাল্টায় ইনট্রিপিট গ্রুপ ও ইনট্রিপিট ক্যাপিটাল নামে দুটি কোম্পানি গঠন করেছেন ২০১৫ সালে। তিনি কোম্পানি দুটির শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক।
চট্টগ্রামের বেঙ্গল শিপিং লাইন লিমিটেড, পাম ভিউ, ১০১-এ, আগ্রাবাদ ঠিকানা ব্যবহার করে মাল্টায় তিনটি কোম্পানি খুলেছেন মোহাম্মদ এ মালেক নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি ১৯৯৩ সালে মাল্টায় নিবন্ধিত শামস শিপিং লিমিটেডের পরিচালক, ১৯৯৭ সালে নিবন্ধিত কামার শিপিং লিমিটেডের পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার এবং ১৯৯৭ সালে নিবন্ধিত মারজান শিপিং লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এ ৩টি কোম্পানির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার মাওলানা শওকত আলী রোডের ৭৭ নম্বর বাড়ির মোহাম্মদ এ আউয়ালের নামও রয়েছে।
এছাড়া সুইডেনের নাগরিক এরিক জন এন্ডারসন উইলসন ঢাকার উত্তরা এলাকার ১৩ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে মাল্টায় ২০০৯ সালে নিবন্ধিত ডাব্লিউএমজি লিমিটেড নামে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ঠিকানা ব্যবহার করে আতিকুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি ২০০১ সালে মাল্টায় নিউ টেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন।
বাংলাদেশি ও ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দেওয়া আমানুল্লাহ চাগলা ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসের ৮ নম্বর লেনের ৪৫৮ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে মাল্টায় ২০০৯ সালে নিবন্ধিত পদ্মা টেক্সটাইলের পরিচালক হয়েছেন। ডাবলিনের ঠিকানা ব্যবহার করে মাহমুদ হোসেন নামের একজন গ্লোবাল এডুকেশন লিমিটেড নামে ২০১৪ সালে একটি কম্পানি খুলেছেন মাল্টায়। তিনি কোম্পানিটির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার। ডাবলিনের ঠিকানা ব্যবহার করে মো. রেজাউল হক নামের একজন মিলেনিয়াম কলেজের পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। কলেজটি মাল্টায় ২০১৪ সালে নিবন্ধিত।
মো. কামাল ভূইয়া নামের একজন সালামা উম আলকুয়েন (বিদেশি ঠিকানা) ব্যবহার করে মাল্টায় ২০০৮ সালে ভূঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। তিনি কোম্পানিটির পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার ও সচিব। ইতালি-বাংলাদেশি পরিচয় দেওয়া ও পাদোপের ঠিকানা ব্যবহার করা ইউসুফ খালেক নামের একজন ২০১৬ সালে মাল্টায় কে এ কনসাল্ট লিমিটেড এবং কে এ সার্ভিস লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছেন। তিনি কোম্পানি দুটির শেয়ারহোল্ডার।
নতুন তালিকায় ১ লাখ ২০ হাজার জনের নাম প্রকাশ করা হলেও আইসিআইজে বলছে, তালিকা এখনো অসম্পূর্ণ। পর্যায়ক্রমে আরো নাম প্রকাশ করা হবে।