বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বা ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। বদ্বীপ আকৃতির কারণে বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি উঁচুতে অবস্থিত নয়। তাই সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত হবে দেশের উপকূল অঞ্চলের মানুষ। হয়েছেও তাই। এক দশক পার হলেও সিডরের ক্ষত এখনো সারেনি; ক্ষতিও পুরোটা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। গেল বছর হাওড়ের বন্যা পরিস্থিতিও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি শিকার হবে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পানি, মাটি ও ফসলের ওপর। পানীয়জলের তীব্র সংকট সৃষ্টি হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। সময় হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণের। আশার কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী এক যুগে বাংলাদেশে ১৭২ বিলিয়ন ডলার ক্লাইমেট-স্মার্ট বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা বলছে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা ক্রমে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন হচ্ছে দেশে, যার প্রভাব পড়ছে আমাদের পরিবেশের ওপর। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো এরই মধ্যে ঝুঁকছে সবুজ শিল্পের দিকে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং তা থেকে অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজতে ব্যস্ত বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থার নীতিনির্ধারকরা। এখানে দেখার বিষয় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কতটা পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হতে পারি। একদিকে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে, অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও দক্ষতার অভাব সুস্পষ্ট। এ সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশের অভ্যন্তরে যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আনতে বা বিনিয়োগকে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে কার্যকর উপাদানগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ কাম্য।
বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক বীমা খাতের কোম্পানিগুলো আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় বন্যা ও খরার হিসাব নিতে শুরু করেছে। জ্বালানি কোম্পানিগুলো তেল ও কয়লার মতো জীবাশ্ম থেকে সরে আসার উপায় অনুসন্ধান করছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে ঋণ দিতে আগ্রহী। আমাদের দেশের সরকারও জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে এরই মধ্যে দুশোর বেশি আইন ও ধারা তৈরি করেছে। এ আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ জরুরি। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব আবাসন, জ্বালানিসাশ্রয়ী ভবন, বহুমুখী গণপরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই আমাদের ক্রমে এ ধরনের ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া রাজনীতি ও দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে এ বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে না লাগালে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র: বণিকবার্তা।