ভারত পরিকল্পিতভাবে সুতাশিল্পকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে!
প্রচ্ছদ » Breaking News || Slider || অর্থনীতি » ভারত পরিকল্পিতভাবে সুতাশিল্পকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে!
পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: প্রতিবেশী দেশ ভারত পরিকল্পিতভাবে এদেশের সুতাশিল্পকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। তারা দৃশ্যত তুলা রপ্তানি বন্ধ রাখলেও সুতা রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। বরং বৈধ ও অবৈধ পথে কম দামে বাংলাদেশে সুতা পাঠিয়ে দেশীয় সুতা শিল্পের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া না হলে এদেশের সুতাশিল্প টিকে থাকতে পারবে না। পুরো সুতোশিল্পটাকে ভারতীয়দের দয়ার উপর ছেড়ে দিতে হবে অসহায়ভাবে।
সূত্র মতে, সুতার বাজারে ভারতের অসম প্রতিযোগিতা দেশীয় বাংলাদেশের সুতাশিল্পকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। দেশে তুলা ও সুতার তীব্র সঙ্কট মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে গার্মেন্টস ও তাঁতশিল্পে। আবার তুলা ও সুতার উচ্চমূল্যের কারণে দেশী সুতা উৎপাদনকারীরা ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। সুতার তীব্র সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত গত বছরের মজুদ সুতা থেকে কম দামে বাজারে ছেড়ে দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের বাজার। ফলে সুতার বাজার এখন প্রায় পুরোপুরিই ভারতের নিয়ন্ত্রণে।
এ পরিস্থিতিতে দেশী সুতা তৈরী কারখানাগুলোর (স্পিনিং মিল) অবিক্রিত সুতার মজুদ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছে দেশের স্পিনিং মিলগুলো। এ অবস্থায় সরকারের কাছে দেশী সুতাকলগুলোকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
সূত্র মতে, তুলা সুতার সঙ্কটে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি খাতে প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশে তুলা রফতানি বন্ধ রাখলেও সুতা বিক্রিতে কোন নিষেধাজ্ঞা রাখেনি। এ সুযোগে ভারত কমদামে গত বছরের মজুদ থেকে এদেশের বাজারে সুতা ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু এদেশী সুতা উৎপাদকরা বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে তুলা কিনে সুতা তৈরির উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না। ফলে দেশের কয়েকশ’ সুতাকলে প্রতিদিনই বাড়ছে শত শত কোটি টাকার অবিক্রীত সুতা মজুদ কিন্তু দেশী সুতা উৎপাদকরা উৎপাদিত সুতা বিক্রি করতে না পারলে অধিকাংশ স্পিনিং মিলই ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। ফলে অনেক স্পিনিং মিলই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিটিএমএ সূত্র মতে, দেশে তৈরি সুতার বাজার এখন ক্রেতাশূন্য। ফলে গত কয়েক মাসে স্পিনিং মিলগুলোতে শত শত কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশ্ববাজারে তুলার দাম বাড়ার কারছে সুতার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যাও সুতার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই দেশে উৎপাদিত সুতার দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে কমদামে সুতা আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশী সুতার বাজার একেবারে পথে বসার মতো অবস্থায়। ফলে দিন দিন লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে স্পিনিং মিলগুলোর।
দেশে প্রতিবছর তুলার চাহিদা প্রায় ৪০ লাখ বেল। এ তুলার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশী স্পিনিং মিল মালিকরা বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করে সুতা তৈরি করে। কিন্তু ভারত এদেশের স্পিনিং মিলগুলোর সুতা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করছে। ফলে দেশী সুতা উৎপাদকরা বাজারে টিকতে পারছে না। সূত্র মতে, মূলত ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ উভয়পথেই বিপুল পরিমাণ ওভেন ফেব্রিক আমদানি হচ্ছে।
অন্যদিকে স্পিনিং মিলগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকায় দেশের বস্ত্রশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করেছে বস্ত্র ও সুতাকল মালিকরা। পাশাপাশি ভারত থেকে অবাধে ওভেন ফেব্রিক আমদানিরও বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন বস্ত্র ও সুতাকল মালিকরা। কিন্তু বস্ত্রমন্ত্রী কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি।
সূত্র: প্রাইমনিউজবিডি।