যমুনার ভাঙনরোধে খণ্ড খণ্ড অঞ্চল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প

প্রচ্ছদ » জাতীয় » যমুনার ভাঙনরোধে খণ্ড খণ্ড অঞ্চল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প

 

পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় ‘যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগের (৩ নভেম্বর) একনেক সভায় ‘যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ নামে আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সামগ্রিক পরিকল্পনা ছাড়াই এভাবে খণ্ড খণ্ডভাবে যমুনা তীর রক্ষায় একাধিক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।

প্রকল্প দুটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলো যাচাইবাছাই করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। একবার যমুনার ডানতীর আরেকবার বামতীর রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প আগেও নেয়া হয়েছে, এখনও হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে না করে বিচ্ছিন্নভাবে কেন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে এটা গত ৩ নভেম্বরের একনেক সভাতেই প্রশ্ন করা হয়েছিল।

জবাবে ওইদিন কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লীপ্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণ পানির ফ্লো আসে, যে পরিমাণ বালু ও কাদামাটি নিয়ে আসে, এটা একদিকে আশীর্বাদ আরেকদিকে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আশীর্বাদ হলো নদীর পার্শ্ববর্তী কৃষিজমি, সেগুলোতে পলি পাচ্ছে। সমস্যা হলো এর ফলে আমাদের নদীগুলোতে প্রতিনিয়ত চর পড়ছে। কারণ মাঝখানে চর তৈরি হলে পানি হয় ডানবাম দিকে যাবে, নয়তো ভাগ হয়ে যাবে। যখন ভাগ হয়ে যায়, তখন দুই দিকে ভাঙন সৃষ্টি হয়।

পরিকল্পনা সচিব বলেছেন যে, ‘প্রধানমন্ত্রী (৩ নভেম্বর) জোর দিয়ে বলেছেন, নিয়মিত নদীখনন করতে হবে। আসলে কন্টিনিউয়াস ড্রেজিং ইজ নট ম্যাটার অব ফান (নিয়মিত খনন সাধারণ কোনো বিষয় নয়)। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রজেক্টবেজড অ্যাপ্রোচ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রজেক্টবেজড অ্যাপ্রোচ থেকে সরে এসে আমাদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে অ্যাজ মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং। সেখানে যেতে পানিসম্পদ সচিব ও মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাতে আমাদের মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য নিজস্ব ড্রেজার দরকার।’

‘অর্থাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ড্রেজার দরকার। একটা ড্রেজারের দাম পড়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। আমাদের সচল ড্রেজার আছে মাত্র পাঁচ-ছয়টা। তারা ভাড়া করে নিয়ে আসে। তাদের ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজারের একটা প্রকল্প দিয়েছে কিছুদিন আগে। এ প্রকল্পে ছয় হাজার কোটি টাকায় তারা ড্রেজার কিনবে মাত্র ৩২টা। সুতরাং সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কিন্তু বড় নদীগুলোতে আমরা স্টাডির মাধ্যমে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে যাব। সেক্ষেত্রে নদীর ডান ও বামতীর সংরক্ষণের প্রকল্প যে ঘন ঘন আসছে, হয়তো তখন একই নদীতে এরকম এত প্রকল্প আসবে না।’

‘যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ৭৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে, নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ কাতালমারীতে দুই কিলোমিটার, গোবিন্দিতে দুই কিলোমিটার, হলদিয়ায় ছয় কিলোমিটার এবং বাঁধ পুনরাকৃতি করা হবে ১৫ কিলোমিটার।

যমুনা নদীর ডানতীরে ১০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ এবং ১৫ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকায় অবস্থিত বসতবাড়ি, কৃষিজমি, বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসঞ্চালন লাইন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ প্রায় পাঁচ হাজার ১২৬ কোটি ১০ লাখ টাকার সম্পদ নদীভাঙন থেকে রক্ষা করা। এর মাধ্যমে সামাজিক ও প্রাকৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যবিমোচনসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।

গত ৩ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত ‘যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন খরচ ৫৬০ কোটি সাত লাখ ৫৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় ছয় কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতি করা, ১ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত নদীতীর সংরক্ষণ কাজ পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করা ইত্যাদি কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট – নূ/আ/সি/ ১৭ নভেম্বর,২০২০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *