নির্বাচন পর্যবেক্ষণে হাত গুটিয়ে বসে আছে বিনিয়োগকারীরা

প্রচ্ছদ » Uncategorized » নির্বাচন পর্যবেক্ষণে হাত গুটিয়ে বসে আছে বিনিয়োগকারীরা

DSE--CSE111পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ‘দেখি কী হয়’ নীতিতে ধীরে চলা নীতি গ্রহণ করেছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার বিক্রি করে বাজার ও দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে তাঁরা। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকায় শেয়ারের দাম নিম্নমুখী। ক্রমেই নিচের দিকে নেমে চলেছে পুঁজিবাজার। যদিও নির্বাচনের সময় বাজারকে সাপোর্ট দিতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্যত কোনো ফল আসেনি।

পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা কী হচ্ছে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। শেয়ার কেনাবেচার চেয়ে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় সরব তাঁরা।

বেলা পৌনে ২টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাশে একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনজন বিনিয়োগকারী। চা-বিস্কুট খাওয়ার ফাঁকে আলোচনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুস সালাম জানতে চাইলেন দেশের পরিস্থিতি কী? কী হতে পারে? এমন প্রশ্ন সবারই।

আব্দুস সালাম জানান, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এখন শেয়ার কেনাবেচা নেই। পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা থেকে তাঁর আয়। কিন্তু এখন লেনদেন করছেন না। সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও বিক্রি কমেছে। কিনছেন কমই কিন্তু বিক্রি করছেন বেশি। মূলত, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই বিক্রি করছেন বেশি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা অর্থনীতিতে প্রভাবের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও প্রভাব ফেলে। এই জন্য পুঁজিবাজারে এবার কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময় ব্যবসা করছেন এমন কয়েকজন কালের কণ্ঠকে জানান, অন্যান্য নির্বাচনের সময় পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়লেও এবার কিছুটা ভিন্ন। একটানা পতন কিংবা অস্থিরতা একটু বেশিই। তবে কী কারণে এমন হচ্ছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ভয় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই পুঁজিবাজারে নিম্নমুখিতা। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই এই নিম্নমুখিতা বড় হচ্ছে। গতকাল সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ডিসেম্বরে গতকাল পর্যন্ত ১১ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে সাত কার্যদিবসেই বড় পতন হয়েছে আর চার দিন মূল্যসূচক বেড়েছে। আর লেনদেনও রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার ঘরেই। এই সময়ে মূলধন কমেছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে বিনিয়োগকারীর মধ্যে একটা ভয় রয়েছে। কী জানি হয়, কী জানি হয় এমন ধারণায় ছোট বড় সব বিনিয়োগকারী বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। এতে বাজার একদম তলানিতে নেমেছে। নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতায় মূলধন হাতেই রাখছে বিনিয়োগকারী। কিন্তু বাজার নিম্নমুখী হওয়ার কোনো কারণ নেই। আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

চলতি মাসের ১১ কার্যদিবসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাত দিনে পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। কিন্তু চার দিনে বেড়েছে ৭৯.৪৪ পয়েন্ট। মাসের প্রথম দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল পাঁচ হাজার ২৯০ পয়েন্ট আর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৮১ হাজার ৭৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু গতকাল মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২১৮ পয়েন্ট আর মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ১৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে সূচক কমেছে ৬৪ পয়েন্ট আর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ৭৬৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

ডিএসইর সদস্যভুক্ত এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে ব্যবসা রয়েছে কিন্তু এবারের নির্বাচনকে ঘিরে পতন আগে দেখিনি। একটা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে পুঁজিবাজারকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। নানা গুজব ছড়িয়ে সরকার পরিবর্তন বা দেশের অস্থিতিশীলতার কথা ছড়িয়ে অস্থির করে তুলছে। এ বিষয়টি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

টেলিকম ও জ্বালানি ব্যতীত সব খাতে পতন : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টেলিকম ও জ্বালানি খাত ব্যতীত সব খাতের কম্পানির শেয়ারের দামেই পতন ঘটেছে। এ নিয়ে টানা সাত কার্যদিবস পুঁজিবাজারে পতন ঘটল। গতকাল রবিবারের পতন বা লেনদেন বিগত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ ডিএসইতে ৩০০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়েছিল। এই সময়ের পর থেকে লেনদেন বাড়লেও গতকাল আবারও ৩০০ কোটি টাকায় নেমেছে লেনদেন, যা সাড়ে ৮ মাস বা ১৭৪ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

গতকাল সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর মূল্যসূচক কমেছে ৩৩ পয়েন্ট, যা পতনের দিক দিয়ে চলতি মাসে সর্বোচ্চ। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছিল প্রায় ১৩ পয়েন্ট।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেন শুরুর পর সূচক সামান্যই ঊর্ধ্বমুখী হলেও পরবর্তীতে হ্রাস পেয়েছে। পাঁচ মিনিট সূচক ঊর্ধ্বমুখিতার পর ধারাবাহিকভাবে পতন ঘটে। এতে দিনের সূচক কমার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২১২ পয়েন্ট। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২০১ ও ডিএসই-৩০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৪২ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ৩৩৯ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬১টির বা ১৮ শতাংশ কম্পানির, দাম কমেছে ২৩১টির বা ৬৮ শতাংশ কম্পানির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭ বা ১৪ শতাংশ কম্পানির।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কম্পানির লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই সিরিঞ্জের লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি দুই লাখ টাকা। আর তৃতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ারের লেনদেন হয়েছে আট কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ছয় লাখ টাকা। আর সূচক কমেছে ৫৬ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া ২৩৭ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪২টির, দাম কমেছে ১৭১টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪ কম্পানির শেয়ারের দাম।

সূত্র: কালের কন্ঠ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *