প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে ৫ বছর ধরেই একই প্রবৃদ্ধি!

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে ৫ বছর ধরেই একই প্রবৃদ্ধি!

probriddiপুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গবাদিপশু ও গৃহপালিত পাখি হিসাবে নিয়ে পরিমাপ করা হয় প্রাণিসম্পদ খাতের মোট উৎপাদন। দেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে সংখ্যাগত কিছু পরিবর্তন হলেও পাঁচ অর্থবছর ধরে একই হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। একে কিছুটা বিস্ময়কর বলছেন পরিসংখ্যানবিদরা। তাদের মতে, সাধারণত দশমাংশের মধ্যে হলেও কিছুটা তারতম্য থাকে

দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে একই হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে পাঁচ বছর ধরে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত টানা পাঁচ অর্থবছরে দেশে গবাদিপশু ও পোলট্রি উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ হারে। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গবাদিপশু ও গৃহপালিত পাখি হিসাবে নিয়ে পরিমাপ করা হয় প্রাণিসম্পদ খাতের মোট উৎপাদন। এ প্রাণিসম্পদের সংখ্যাগত কিছু পরিবর্তন হলেও একই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন কিছুটা পারিসংখ্যানিক বিস্ময়কর বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএলএসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজারে। এর আগের অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ খাতের মোট উৎপাদন ছিল ৩৮ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এ খাতে একই হারে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ৩৭ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাতটিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৬২ লাখ ৬৫ হাজারে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৬২ হাজার। অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার। হিসাব করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬—এ তিন অর্থবছরেও দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩৮ শতাংশের ঘরে। অর্থাৎ, হারের দিক থেকে পাঁচ বছর ধরে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি।

এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, দেশে গবাদিপশু উৎপাদনে একদমই প্রবৃদ্ধি নেই। কিছুটা প্রবৃদ্ধি আছে মুরগি ও পোলট্রিতে। ফলে সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট বৃত্তে আটকে গেছে। সেখান থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি আটকে যাওয়ার চেয়ে উৎপাদন না বাড়ার বিষয়টিই বেশি উদ্বেগের। গবাদিপশুর জন্য খাদ্য, সেবা ও চিকিৎসা এখন অনেক ব্যয়বহুল। উন্নত মানের জাত উদ্ভাবনে খুব বেশি নজর নেই। উন্নত ব্রিডিং এখনো জনপ্রিয় করা সম্ভব হয়নি। তাই পশু লালন-পালন ব্যবস্থাপনা যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে চিকিৎসাসেবাও। এক্ষেত্রে গবেষণা জোরদারের মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া উপযোগী জাত উদ্ভাবন করতে হবে। কিছুটা চারণভূমিরও ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন উন্নত মানের জাত। এজন্য প্রয়োজন উন্নত ব্রিড। কিন্তু দেশে বর্তমানের ব্রিডগুলো যথেষ্ট উন্নত নয়। গরুর জাত উন্নয়নে দেশে এখনো অনেক বছরের পুরনো ব্রিড নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। উন্নত জাত না আসায় দেশী গাভীগুলোও এখন দুধ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের গাভীর তুলনায় বেশ পিছিয়ে। মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, ভালো জাত না থাকায় বাড়তি খাবার ও শ্রম দিয়ে তুলনামূলক কম পরিমাণে মাংস উৎপাদন করছেন খামারিরা। ফলে তারাও খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না। উন্নত বিশ্বে যেখানে প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনের জন্য গরুকে গড়ে খাবার দিতে হয় সাড়ে তিন-চার কেজি, সেখানে বাংলাদেশের গরুকে দিতে হয় সাত-সাড়ে আট কেজি। উন্নত জাত আনতে না পারায় দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বাড়াতে বর্তমানে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিগুলোর সঠিক সম্প্রসারণের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিরাপত্তার অজুহাতে গোঁড়ামি করলে খামারিদের কাছে দ্রুত উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই গবাদিপশু ও পোলট্রির উন্নত বিদেশী জাতকে কাজে লাগিয়ে দেশেই জাত উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি দেশী উন্নত জাতগুলোর সহায়তায়ও জাত উন্নয়ন করতে হবে। তাহলেই প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, খাতটিতে এখন পরিমাণগত উন্নয়নের চেয়ে গুণগত মান বৃদ্ধির ওপরই বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। যেমন পাঁচটি গরু থেকে ১০ লিটার দুধ উৎপাদন না করে এখন একটি গরু থেকে ১০ লিটার দুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে প্রাণীর উৎপাদন তথ্যে এক ধরনের স্থিতাবস্থা দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমরা এখন দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া উৎপাদনের স্থির প্রবৃদ্ধি থেকে উত্তরণের জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রবৃদ্ধির হারকে ৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য নানাবিধ প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে।

পাঁচ অর্থবছর ধরে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি একই বৃত্তে আটকে থাকলেও এর পরিসংখ্যানগত উত্কর্ষতা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ডিএলএসের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একাধিক পরিসংখ্যাবিদ বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, পর পর পাঁচ বছরই প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ হওয়া কিছুটা বিস্ময়কর। সাধারণত দশমাংশের মধ্যে হলেও কিছুটা তারতম্য থাকে।

সূত্র: বণিক বার্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *