রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : বছরে ১০ কোটি ডলারের মাছ মরবে
প্রচ্ছদ » বাজার বিশ্লেষন » রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : বছরে ১০ কোটি ডলারের মাছ মরবেপুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক : রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বর্জ্য হিসেবে যে ছাই বের হবে, এই ছাইয়ের দূষণে বছরে ১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ টাকার মাছ মারা যাবে। ছাই থেকে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেড বা সিসা, পারদ, সেলিনিয়াম ও থেলিয়ামসহ বেশ কিছু বিষাক্ত ভারী ধাতু বের হবে।যা পরিবেশকে দীর্ঘমেয়াদি দূষণ তৈরি করবে।
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সেমিনারে যোগাযোগের মাধ্যম স্কাইপের মাধ্যমে তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আয়োজনে ওই সেমিনারে দেশের শীর্ষ স্থানীয় জ্বালানি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
এতে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ৬০ বছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন ছাই বের হবে। যার ১ কোটি ৮০ লাখ টন ছাই বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হবে। বাকি ২ কোটি টন ছাই পুকুর বানিয়ে সেখানে ফেলা হবে—যা যেকোনো সময় ঝড় বা বন্যার কবলে পড়ে পুরো সুন্দরবন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে খুলনা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ডেনিস লেমনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বর্জ্য হিসেবে যে ছাই বের হবে, তাতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেড বা সিসা, পারদ, সেলিনিয়াম ও থেলিয়ামসহ বেশ কিছু বিষাক্ত ভারী ধাতু বের হবে, যা সুন্দরবনের প্রতিবেশ-ব্যবস্থায় প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি দূষণ তৈরি করবে।
ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যদি কয়লা আমদানি করা হয়, তাহলে ১৫ শতাংশ ছাই উৎপন্ন হবে, আর ভারতীয় কয়লা আনলে ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ ছাই উৎপন্ন হবে। এসব ছাই রাখার জন্য ৫০০ হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হবে; যা ৬ বছরের মধ্য পূর্ণ হয়ে যাবে। রামপাল এলাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা বেশি—এ তথ্য উল্লেখ করে ডেনিস বলেন, ওই এলাকায় এমনিতেই ঝড়বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়। ফলে পুকুর উপচে ও চুইয়ে তা সুন্দরবনের নদী-জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়বে।
সেমিনারে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, আজ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে কাল থেকে তার প্রভাব দৃশ্যমান হবে তেমনটা নয়। এর প্রভাব পড়বে দীর্ঘ মেয়াদে।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, ‘সুন্দরবনে কয়লার ছাই থেকে যে দূষণ হবে, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয় পড়বে। তখন আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা করি না কেন, তাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কোন জায়গায় এটি করলে আমাদের ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় কমিটির শরিফ জামিল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।