বসন্ত-ভালোবাসায় কোটি টাকার ফুল বিক্রি

প্রচ্ছদ » Uncategorized » বসন্ত-ভালোবাসায় কোটি টাকার ফুল বিক্রি

পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক :বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের ১ তারিখ মানেই বসন্তের আগমন। এ উপলক্ষে প্রতি বছর ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকার ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎযাপিত হয় ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

গত সোমবার এবং গতকাল মঙ্গলবার ছিল উল্লেখিত দুইটি বিশেষ দিবস। প্রথমদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ গত সোমবার দেশে উদযাপিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি গতকাল মঙ্গলবার উৎযাপিত হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রতিবারের মতো গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশ ভেসেছে ফুলের বন্যায়। রাস্তা-ঘাট, মাঠসহ প্রায় সব স্থানেই দেখা গেছে নানা রঙের ফুলের মেলা। অনেকের ঘরও সেজেছে রঙিন ফুলে।

চট্টগ্রাম নগরীতেও অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে। বসন্ত উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত দুইদিন নগরীর সব প্রান্তের ফুলের চাহিদা কয়েকগুণ বেশি ছিল। প্রতিটি ফুলের দোকান ছিল সরগরম। ব্যস্ত সময় পার করেছে ফুল চাষী থেকে শুরু করে ফুল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা; ব্যবসা ছিল জমজমাট। গত দুইদিনে শুধু চট্টগ্রাম নগরীতে দেড় কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ৩২০টি দোকানে ফুল বিক্রি করা হয়েছে।IMG_20170214_144918

নগরীর ফুলের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ যেকোনো সময়ের তুলনায় বসন্ত উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ২-৩ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে প্রায় সব ধরনের ফুল। ৫ টাকার লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকায়; বিদেশি লাল, সাদা, গোলাপী রঙের গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকায়। রজনীগন্ধার প্রতিটি স্টিকের জন্য ক্রেতাদের দিতে হয়েছে ১২-১৫ টাকা; চন্দ্রমল্লিকা ৩০ টাকার বদলে বিক্রি হয়েছে ৫০-৮০ টাকায়।

প্রতিটি ১০ টাকার কালার গ্লেডিয়াসের দাম রাখা হয়েছে ২০-২৫ টাকা। ১৫ টাকা দামের জার্বারা ফুল বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকায়; ৮০ টাকার চায়না লিলি ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা; চায়না কান্ডিশন ও অর্কিড সাধারণত প্রতি পিস ৮০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। এছাড়া ২০০-৩০০ টাকা দামের প্রতিটি ফুলের তোড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০-৭০০ টাকায়। একইসঙ্গে প্রায় সব ধরনের ফুলের ঝুড়ি ও মুকুটের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। মানভেদে ফুলের ঝুড়ি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর প্রতিটি ফুলের মুকুটের (ফ্লাওয়ার রিং) দাম রাখা হয়েছে ১০০-২০০ টাকা।

অপরাজিতা পুষ্পবিতানের স্বত্তাধিকারী এবং চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ও ফুল চাষী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অর্থ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, শীতকালে চারপাশে বিয়ের ধুম নামে বলে শীত মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই ফুলের চাহিদা থাকে। এর মধ্যে থার্টি ফাস্ট নাইটের উৎসবও যোগ হয়। আর শীতকালের শেষের দিনে বসন্ত উৎসব এবং এর পরদিন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তিনি আরও জানান, গত দুই দিন বসন্ত উৎসব এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কারণে সব ধরনের ফুলের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এই দুই দিনে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষরাও প্রচুর ফুল কিনেছেন। অনেকে আবার এ দিনগুলোতে বিয়ে করেন। এতে বাড়তি চাপ ছিল। ব্যবসা যথেষ্ট ভালো হয়েছে।

ফুলের উৎসব সম্পর্কে হেলাল উদ্দিন বলেন, যশোর, ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জ, চুয়াডাঙা, সাভার, চকরিয়া, সাতকানিয়া ও হাটাহাজারী থেকে ফুল এনে স্থানীয় দোকানগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করি।

ফ্লোরাল আর্টের স্বত্তাধিকারী কুতুব উদ্দিন জানান, এবার মাঘ মাসের শেষ দিন থেকে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। বসন্ত উৎসবের জন্য অনেক সংগঠন কয়েকদিন আগেই ফুলের অর্ডার দিয়েছিল। পহেলা ফাল্গুনে আমাদের সব কর্মীই সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। ওই রাতেও আমাদের প্রচুর ফুল সরবরাহ করতে হয়েছে। এরপর গতকাল ভালোবাসা দিবসেও অনেক ফুল বিক্রি হয়েছে। শুধু এ দুই দিনেই দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি আমি।

তিনি আরও বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় ফুলের তেমন চাহিদা থাকে না। তারা সারা বছরই লোকসান দিয়ে দোকান চালাতে হয়। শীতকালেই ফুলের চাহিদা বাড়ে। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ, থার্টি ফার্স্ট নাইট, বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশেষ দিনগুলোতেই মূলত ফুলের ব্যবসা হয়। তাই এসব দিনের আমাদের বিশেষ টার্গেটও তাকে। সারা বছরের লোকসান তুলে নিতে ওই দিনগুলোকেই কাজে লাগানো হয়। আশা করছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। গত দুই দিনের ব্যবসায় বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো বলে আশা রাখি।

ওয়েসিস ফ্লাওয়ারের দোকানী মো. জাকের বলেন, চীন ও ভারত থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বিভিন্ন রকমারি ফুল আমদানি করেছি। এছাড়া যশোর থেকে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ফুল আমদানি করা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, বৈলতলী ও গরুর বাজারের বাগান থেকেও চাষিরা ফুল পাঠিয়েছে।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাছের গনি চৌধুরী জানান, গেল বছরে ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রায় ৮০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। তারপরও লোকসান গুনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে লোকসান হয়নি বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, দুইটি উৎসব একসঙ্গে হওয়া মানেই ফুল ব্যবসায়ীদের পৌষ মাস। তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আমরা দেশ-বিদেশের রকমারি ফুল আমদানি করি। ফুলের চাহিদা বেশি হওয়ায় ফুলের দামও দুই-তিনগুণ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা লাভবানও হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *