২০২০ সালের মধ্যে রফতানি হবে বিবিএস কেবলস : এমডির

প্রচ্ছদ » Uncategorized » ২০২০ সালের মধ্যে রফতানি হবে বিবিএস কেবলস : এমডির

২০০০ সালে চাকরি ছেড়ে স্পিড বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স গঠনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করা প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদার। এক বন্ধুকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে সে বন্ধু বিবিএস এর চেয়ারম্যান। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণে বর্তমানে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম (বিবিএস) লিমিটেড। পরবর্তীতে বিবিএস কেবলসসহ আরো সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডটকমের সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। নিন্মে স্বাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : প্রথমে কিভাবে ব্যবসা শুরু করলেন ?

আবু নোমান হাওলাদার : আমি ব্যবসা শুরু করি ২০০০ সালে । ২০০০ সালে আমি চাকরি ছেড়ে স্পিড বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স প্রতিষ্ঠা করি। সেখানে আমি মেকানিক্যাল এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ইরোশনের কাজ করতাম। প্রসেস ইন্ডাষ্ট্রিগুলোর সিমেন্ট প্লান্টের কাজ করতাম। টেক্সটাইল কারখানার মেশিন স্থাপনের কাজ করতাম। আমার বন্ধু প্রকৌশলী বদরুল ইসলাম, তাকে নিয়ে কারখানার কাজ পরিচালনা করি। যিনি বর্তমানে বিবিএসের চেয়ারম্যান। ২০০৫ সালের দিকে আমরা ব্যাংকে যাই ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। পরবর্তীতে আরো দুইজন পরিচালক নিয়োগ দেই। ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালে আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হই। এরই মধ্যে আমরা বিবিএস কেবলস প্রতিষ্ঠা করি । বিবিএস ব্যাকআপের জন্য আরো কিছু কারখানা তৈরি করি বিবিএস ম্যাটানিটি ইন্ডাষ্ট্রিজ । আর সরকারি টেন্ডারের কাজ মিট করার জন্য হেলেক্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করি।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করার চিন্তা মাথায় আসল কীভাবে ?

আবু নোমান হাওলাদার : ব্যবসা করতে হলে সাহস লাগে এবং ঝুঁকি নিতে হয় । চাকরি করার সাথে সাথে আমি অনুধাবন করলাম যে, একজন প্রকৌশলীর যে মেধা তা পূর্ণ প্রয়োগ করা যায় না। একজন প্রকৌশলীর সুযোগ সুবিধা আমি মনে করি, মেধার তুলনায় কম। এছাড়া প্রকৌশল খাতের যে পণ্যগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় এ পণ্যগুলো দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা প্রকৌশল খাতের পণ্য তৈরি করি। আমি প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার করি এবং ম্যানুফ্যাকচারারের সাথে আছি। এজন্যই চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় চলে এসেছি এবং প্রকৌশল পণ্য নিয়েই আছি।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : প্রতিযোগিতার মধ্যে বিবিএস কেবলস নিয়ে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কি?

আবু নোমান হাওলাদার : বিবিএস কেবলস নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছে বর্তমানে যে টার্নওভার আছে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি করা। এছাড়া আমরা ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এ পণ্য রফতানিতে যেতে চাই। বিবিএস কেবল গুণগতমানে যেমন নাম্বার ওয়ান উৎপাদনেও আমরা এক নম্বরে যেতে চাই। আশা করছি ২০২০ সালে আমরা এ লক্ষ্যে পৌছাতে পারব সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : বিবিএস কেবলস আইপিওর অনুমোদন পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আপনার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে কেনো?

আবু নোমান হাওলাদার : আমার কোম্পানির বিশেষত্ত্ব হচ্ছে এ কোম্পানির ব্যবস্থপনায় যারা আছে তারা সবাই প্রকৌশলী। এ কোম্পানির পণ্য হচ্ছে প্রকৌশলী পণ্য। এ কোম্পানির চারজন দক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে। কোয়ালিটি সম্পর্কে তাদের দক্ষতা রয়েছে। এছাড়া আমাদের রয়েছে আস্থা ওদায়বদ্ধতা। যে কোম্পানির পেছনে দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, কোয়ালিটি ও দক্ষতা রয়েছে তার সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। ২০১৩ সালে আমাদের বিবিএস কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। দশ টাকার ফেস ভ্যালুর শেয়ার ৪০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়। চার বছর পরেও ৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। কারণ আমাদের কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছে লাভ দিতে পেরেছে। তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে আবার বেড়েছে। কিন্তু আমাদের কোম্পানির শেয়ারটি তার দর ধরে রাখতে পেরেছে। আমাদের কোম্পানির শেয়ার নিজস্ব গ্রোথে সাসটেইন করেছে। বাজারে শেয়ারের দর কম বেশি নিয়ে আমরা চিন্তিত না কারণ আমাদের শেয়ার একটা অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। এছাড়া আমাদের অতীতের খ্যাতি কর্মকাণ্ড এবং প্রবৃদ্ধি দেখে বিনিয়োগকারীরা আমাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি বিশ্বাস করি, ‘অতীতই আমাদের ভবিষৎ বলে দেবে।’

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : বর্তমান পুঁজিবাজারকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আবু নোমান হাওলাদার : পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবে, সারা বিশ্বে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এর মধ্যেও সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করতে হবে। নিজের পকেটের টাকা বিনিয়োগে আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই পুঁজিবাজার দেশের উন্নয়নে এবং শিল্পায়নে অর্থ যোগানের মাধ্যম হিসেবে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।)

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : বিনিয়োগকারীদের উদ্দ্যেশে যদি কিছু বলেন?

আবু নোমান হাওলাদার : আমি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানির মেরিট দেখে বিনিয়োগ করেন তাহলে আর ঠকতে হবে না। আমাদের বাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ভাল বোঝেন না। না বুঝে শুধু শুনে বিনিয়োগ করে থাকেন। এ কারণে ২০১০ সালে এত বড় একটি ঘটনা ঘটে। অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়েছেন। আমি বলব জেনে শুনে ভাল কোম্পানি দেখে কোম্পানির ইপিএস, ন্যাভ, ডিভিডেন্ড দেয়ার পলিসি দেখে বিনিয়োগ করুন। হাটতে গিয়ে পড়ে যাবে, হোচট খাবে, তার পরও উঠে দৌড় দিতে হবে। এটা প্রসেসিংয়ের অংশ। আশা করি, জেনে, শুনে ও বুঝে বিনিয়োগ করলে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকে।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : দেশে প্রি-ইঞ্জিনিয়ার্ড শিল্পে সম্ভাবনা কেমন? এ শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ কেমন?

আবু নোমান হাওলাদার : স্টিলের পাতের এ শিল্পে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে । দেশে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ টি প্রতিষ্ঠান এ শিল্পের পণ্য উৎপাদন করে। দেশের উন্নয়নের ধারা অনুযায়ী যে পরিমান উন্নয়ন হবে সে হিসেবে মাত্র ১০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে এখনও ৯০ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কারণ উন্নয়নের সাথে সাথে দেশে যে ধরণের মিলকারখানা হবে, ট্রেড স্টোর হবে, ফুড সাইলো হবে, তার পর ওভার ব্রিজ হবে ফ্লাইওভার হবে সবই এই স্টিলের পাতের মাধ্যমে হবে। আমি মনে করি এ শিল্পে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। তাই এখও হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ সেক্টরে সম্ভাবনা অনেক।

পুঁজিবাজার রিপোর্ট : পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডটকমকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবু নোমান হাওলাদার : পুঁজিবাজার রিপোর্টকে ও ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *