সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না খালেদা – অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রচ্ছদ » Uncategorized » সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না খালেদা – অ্যাটর্নি জেনারেল

khaladaপুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: সংবিধান অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিন আসনে খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জের রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার এ কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবীর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে খালেদার রিট শুনানি শেষ করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু গত ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের সময় কারাদণ্ডের কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ইসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে তা খারিজ হয়ে যায়।

এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। আদালতে আজ খালেদার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, যিনি নির্বাচন কমিশনের শুনানি করেছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। এ সময় খালেদার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, একেএম এহসানুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান প্রমুখ।

এ সময় একজন পর্যবেক্ষক আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ইলেকশন এক্সপার্ট মিশনের’ আইনজ্ঞ ইরিনি- মারিয়া গোনারি।

শুনানির শুরুতে এজলাস কক্ষের শেষ সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাকে দেখে বসার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। তখন শেষ সারির একটি বেঞ্চে আইনজীবীরা তাদের পাশে বসান গোনারিকে। শুনানি চলাকালে তাকে নোট নিতেও দেখা যায়।

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সংবিধান বা আইনের কোথাও বলা নেই যে, শুধু নিম্ন আদালতে বা হাইকোর্টে দণ্ড হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে করা একটি দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগের একটি সিদ্ধান্ত বা রায় রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের আগে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে তিনি (সংশ্লিষ্ট) সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পরই সেটা পূর্ণাঙ্গ রায় বলা যাবে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার পৃথক দুটি আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। তাই এরশাদের মামলায় আপিল বিভাগের দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের এ অুনচ্ছেদে চূড়ান্ত সাজার কথা বলা হয়েছে।’

খালেদার আইনজীবীর এসব যুক্তির জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘কোনো মামলায় সাজা (কনভিকশন) হলে তা স্থগিত করার নজির বা আইন নেই। দুটি মামলায় হাইকোর্ট এ কথা বলে দিয়েছেন। আর আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছেন। এ ছাড়া আরেকটি মামলায় আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, সাজা স্থগিতের কোনো বিধান নেই। এ ছাড়া সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুর্নীতির মামলায় ২ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দণ্ড ভোগ করে মুক্তি লাভের ৫ বছর আগে নির্বাচন করতে পারবেন না। সংবিধানের এ বিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়াও নির্বাচন করতে পারবেন না।’

এর আগে খালেদার অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বেআইনিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিল। আমরা আশা করছি, বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতারা আশা করছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী তাকে ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু গত সপ্তাহে হাইকোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

ফলে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ আটকে যায়। একজন বিএনপি নেতা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলেও সর্বোচ্চ আদালতে সাড়া পাননি।

তবে দণ্ডের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিএনপির দুই নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু হাইকোর্টে আবেদন করে প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। সোমবারই তাদের বিষয়ে আদেশ হয়।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদার পক্ষে রিট আবেদন তিনটি রোববার দায়ের করেন তার আইনজীবী নওশাদ জমির।

খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বিএনপি ওই আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থীও ঠিক করে রেখেছিল। খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর রোববার মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বিএনপির পক্ষ থেকে ওই সব আসনে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নামও জানানো হয়।

বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৭ এ প্রার্থী করা হয়েছে মোরশেদ মিলটনকে। খালেদার পৈতৃক এলাকা ফেনী-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মুন্সী রফিকুল আলমকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *