বগুড়ার ধুনটে গরিবের ভিজিডির তালিকায় ধনীদের নাম

প্রচ্ছদ » Breaking News || Slider || আজকের সংবাদ » বগুড়ার ধুনটে গরিবের ভিজিডির তালিকায় ধনীদের নাম

পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক : বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ভুতবাড়ি গ্রামের নুর মোহাম্মাদ একজন লাখপতি গৃহস্থ্য। তার আছে সেমি পাকা বাড়ি, গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, চক ভরা জমি, শ্যালো মেশিন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু তার স্ত্রী আখি খাতুন ভিজিডি তালিকাভুক্ত।

একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সেমি পাকা বাড়ি, গরুর খামার ও বন্ধকি জমি রয়েছে। তার স্ত্রী তাহেরা খাতুনের নামও রয়েছে ভিজিডি তালিকায়। প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুনের স্বামী শাহীন আলম কাঠ ব্যবসায়ী। সেমি পাকা বাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলি জমি থাকা সত্ত্বেও মর্জিনার নাম রয়েছে ভিজিডির তালিকায়।

কেবল আখি, তাহেরা ও মর্জিনাই নন, বানিয়াজান গ্রামের রোজিনা, নাজনীল ও লিপি খাতুনসহ ভিজিডি তালিকাভুক্ত অর্ধেক নারীই স্বচ্ছল।

অথচ ওই ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়েছে শত শত পরিবার। বাস্তুহারা এসব পরিবারের মানুষ নদীর তীরে ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছে। তাদের ভাগ্যে জোটেনি ভিজিডির কার্ড।

উপজেলার ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কার্ডের তালিকা তৈরিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে দুস্থ নারীদের পরিবর্তে স্বচ্ছল পরিবারের নারীদের এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার দশ ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডের বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২ হাজার ৪৮৬টি। যার মধ্যে নিমগাছি ২৭৬টি, কালেরপাড়া ২৩৯টি, চিকাশি ২৪৮টি, গোসাইবাড়ি ২৭৭টি, ভান্ডারবাড়ি ১৬১টি, ধুনট সদর ২৪৫টি, এলাঙ্গী ২১০টি, চৌকিবাড়ি ২৬৬টি, মথুরাপুর ৩০০টি ও গোপালনগর ইউনিয়নে ২৬৪টি। নতুন কার্ডধারীরা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন।

নীতিমালা অনুযায়ী, অতিদরিদ্র পরিবারের প্রধান যার অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই এবং যাদের জমি ০.১৫ শতকের নিচে কেবল তারাই কার্ড পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্তা ও হতদরিদ্রসহ কয়েক শ্রেণির দুস্থ ও অসহায় নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, সরকার দলীয় লোকজন ও কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ভিজিডির তালিকায় নাম দেয়ার কথা বলে অসহায় দুস্থদের কাছ থেকে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন।

এদিকে সরকার দুস্থ ও অসহায় মানুষদের খাদ্য নিশ্চিত করাসহ এক ব্যক্তি একাধিক সুবিধা যাতে না নিতে পারে সেজন্য অনলাইন আবেদন আহ্বান করে। আবেদনও করে দরিদ্ররা। কিন্তু বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকার দলীয় নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে করে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে একদিকে প্রকৃত দুস্থ ও অসহায়রা এ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অন্যদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের এ প্রকল্পটির প্রকৃত উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।

ভিজিডি সুবিধাবঞ্চিত একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, আমরা টাকা দিতে পারি না, তাই আমাদের নামে কোনো কার্ডও হয় না। যারা টাকা দিতে পারে তাদের নামে সব ধরনের কার্ড হয়।

এ সময় তারা আরও অভিযোগ করেন, যারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার কার্ড পেয়েছে, টাকার বিনিময়ে তারাও ভিজিডি কার্ড নিয়েছে। শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির একাধিকবার ভিজিডি সুবিধা নেয়ার অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা যে তালিকা দিয়েছেন সেই তালিকা অনযায়ী কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তার জানা নেই। তার দফতরে জনবল কম থাকায় যাচাই-বাছাই করার সুযোগ হয়নি।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, চূড়ান্ত বাছাইয়ের পর ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পুঁজিবাজার রিপোর্ট – আ/ব/সি/ ১৭ ফেব্রুয়ারী , ২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Live Video

[ytplayer id=33256]

সম্পাদকীয়

অনুসন্ধানী

বিনিয়োগকারীর কথা

আর্কাইভস

May ২০২৪
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Apr    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১