ডিএসইতে সেপ্টেম্বরেই যুক্ত হচ্ছে চীন!
প্রচ্ছদ » Uncategorized » ডিএসইতে সেপ্টেম্বরেই যুক্ত হচ্ছে চীন!পুঁজিবাজার রিপোর্ট ডেস্ক: কৌশলগত অংশীদারের সঙ্গে চুক্তির পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আসছে চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ। বিদেশি বিনিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে যুক্ত হবে চীন। গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক নন-রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা অ্যাকাউন্ট (নিটা) খোলার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চীনের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের শেষ অথবা সেপ্টেম্বরেই একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে ডিএসইতে যুক্ত হবে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ।
১৯৫৪ সালে যাত্রা করা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ইতিহাসে নতুন এ মাইলফলকের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, কারিগরি সহায়তা ও পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে কার্যকরী সহায়ক হবে চীনের প্রথম সারির এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগকারীও। চীনের প্রথম সারির এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত করবে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জকে। ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেন আইন অনুযায়ী ব্লকড হিসেবে থাকা ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের ধারণের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্দেশিত দেশি-বিদেশি কৌশলগত অংশীদার এই শেয়ার ধারণ করতে পারবে। শেয়ারপ্রতি দাম প্রস্তাব ও কারিগরি সহায়তায় অর্থদানের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। সেই অনুমোদনের পরই চলতি বছরের ১৪ মে শেয়ার বিক্রি করতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিরও স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার প্রতিটি ২২ টাকা দামে কিনবে। প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ নেওয়ায় পর শেয়ারপ্রতি দাম এক টাকা করে কমে দাঁড়ায় ২১ টাকা। প্রতিটি শেয়ার ২১ টাকা করে ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনবে কনসোর্টিয়াম। পাশাপাশি কারিগরি ও প্রাযুক্তিক উন্নয়নে ৩৭০ কোটি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) সহায়তা করবে এই কনসোর্টিয়াম। সব মিলিয়ে এক হাজার ২৪৬ কোটির বেশি টাকা পাবে ডিএসই।
জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজার তথা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি বিনিয়োগে চুক্তির আগেই প্রথম দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এখন বিনিয়োগের টাকা আনতে ও বিনিয়োগ থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বা লভ্যাংশ নিয়ে যেতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। এ জন্য চীনা কনসোর্টিয়ামের নন-রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা অ্যাকাউন্ট (নিটা) খোলা প্রয়োজন। অ-বাংলাদেশি তথা বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট ব্যাংলাদেশি (বাংলাদেশি কিন্তু অন্য দেশে বসবাসরত) নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই শেয়ার ব্যবসা করতে পারে। আর এই হিসাবের মাধ্যমে বিনিয়োগের মুনাফা বা লভ্যাংশ দেশের বাইরে নিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষরের পরই চীনা কনসোর্টিয়াম সব দিক থেকেই প্রস্তুত রয়েছে। তবে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের কিছু প্রক্রিয়া থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এখন আর কোনো বাধা বা বিপত্তি নেই। নিটা হিসাব আর কনসোর্টিয়ামের পক্ষে বিও হিসাব খোলার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে কনসোর্টিয়ামের পদচারণা ঘটবে ডিএসইতে। আর অতি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন চীনা স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ তথা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ব্লকড হিসাবে থাকা ডিএসইর শেয়ারের ৪০ শতাংশের মালিক ব্রোকারেজ হাউস বা ২৫০ জন সদস্য। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসার ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সে অনুযায়ীই বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রক্রিয়া চলছে। স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদারের অর্থ আনতে সব প্রক্রিয়া শেষের দিকে। আমরা আশা করছি, চলতি মাসের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই এটি সম্পন্ন হবে।
চীনা কনসোর্টিয়াম স্টক এক্সচেঞ্জের অংশীদার হলে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীর উপকারিতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ প্রথম সারির। বয়সে আমাদের চেয়ে কম হলেও অনেক এগিয়েছে। কিন্তু আমরা সেদিক থেকে অনেক পেছনে। কারিগরি সহায়তা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ পেলে আমরাও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। চীনা স্টক এক্সচেঞ্জের নিজেদের প্রশিক্ষিত কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছে, যারা আমাদের দেশেও আসবে। বিদেশিরা এলে দেশের পুঁজিবাজারের চিত্রও পাল্টে যাবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে বিনিয়োগকারী ও দেশের অর্থনীতিই উপকৃত হবে।
চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর গত ৩ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দেয়। তাদের দেওয়া আগের একটি প্রস্তাব যথাযথ না হওয়ায় ফেরত পাঠিয়ে সংশোধিত প্রস্তাব চেয়েছিল কমিশন। ৩০ এপ্রিল বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি পাওয়ার পরই সংশোধিত প্রস্তাব পাঠালে অনুমোদন দেয় কমিশন।
চীনা প্রস্তাবের নথিপত্র থেকে জানা যায়, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শেনজেন স্টকে প্রধান পণ্য চারটি—ইক্যুইটি, বন্ড, সিকিউরিটাইজেশন পণ্য ও ফান্ড। পঞ্চম প্রজন্মের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে শেয়ার কেনাবেচা হয়। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান পণ্য চারটি—ইক্যুইটি, বন্ড, ফান্ড ও ডেরিভেটিভস। ডিএসইতে পাঁচটি পণ্য থাকলেও নিয়মিত কেনাবেচা হয় দুটির। অন্য পণ্যগুলো চালু করতে কারিগরি ও আইনগত সহায়তার অভাব রয়েছে ডিএসইতে।
প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীনা কনসোর্টিয়াম এসএমই ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়ন, পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়ন, ইনভেস্টর রিলেশন সার্ভিস অটোমেশন ফ্রেমওয়ার্ক, মানবসম্পদ উন্নয়ন, লেনদেন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কারিগরি উন্নয়নে সহায়তা করবে। ইউরোপিয়ান ও গ্লোবাল মার্কেটে ডিএসইর প্রবেশেও সহযোগিতা করবে চীনা এক্সচেঞ্জের জোট। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্ভাবনায় (এসএমই) শিল্পকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে কাজ করবে চীন। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এসএমই খাতকে সহায়তা করতে বড় ভূমিকা রাখবে পুঁজিবাজার।
ডিএসইর এমডি কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অংশীদার হওয়ার প্রক্রিয়াও তখন থেকেই শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের অনুমতি ও প্রক্রিয়াকরণ করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমেই। প্রক্রিয়া চলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পেলেই পর্ষদে যুক্ত হবে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি। চলতি মাসের শেষ কিংবা আগামী মাসেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ ।