মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলাম, পুলিশ কর্মকর্তার আবেগ ঘন স্টেটাস
প্রচ্ছদ » Uncategorized » মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলাম, পুলিশ কর্মকর্তার আবেগ ঘন স্টেটাসপুঁজিবাজার রিপোর্ট প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দায়িত্ব পালনের সময় কনটেইনার বিস্ফোরণে হাত-পা ভেঙে আহত সীতাকুণ্ড থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোতাহের হোসেনে আবেগ ঘন স্টেটাস।
চট্রগ্রাম দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোতাহের হোসের ফেসবুক থেকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে — মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলাম।
গত ৪/৬/২০২২ তারিখ সীতাকুণ্ড থানাধীন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে রাত অনুমান ১০.১০ টার সময় সংগীয় কং চিকসা, কং সুজন, ড্রাইভার কং তুহিন সহ বিএম ডিপো যাই। গাড়ি গেইটের বাহিরে রেখে সবাই ভিতরে যাই। তখন ফায়ার সার্ভিসের ২ /৩ টি ইউনিট কাজ করছিল। আমরা আগুনের অনুমান ২০০ থেকে ২৫০ গজ দুরে অবস্থান করে লোকজনকে নিরাপদ দুরত্বে সরানোর কাজে ব্যাস্থ ছিলাম। বিএম ডিপোর কন্টেইনার স্থান্তরের নিজস্ব ক্রেন দিয়ে আগুনের পাশ থেকে কিছু কন্টেইনার নিরাপদ দুরত্বে স্থানান্তরের কাছে ব্যাস্থ। একজন ফায়ার ফাইটার(সম্ভবত কুমিরা ইউনিট) এসে আমার মোবাইল নিয়ে চট্টগ্রামে তার কোন এক সিনিয়র কে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ক্যামিকেলের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য ফোম সহ আরো কি কি নিয়ে আসতে বললেন। আমরা অনেক লোককে গেইটের বাহিরে বের করে দেই। এরই এক ফাঁকে ক্রেনম্যান আগুনের পাশ থেকে একটা কন্টেইনার ফাঁকা জায়গায় এনে রাখে। কন্টেইনার টা থেকে হালকা ধোয়া বের হচ্ছিল। কং চিকস,কং সুজন কোন কারনে গেইটের বাহিরে যায়। আমি পাশে থাকা একটা কন্টেইনারের আড়ালে দাঁড়ানো। রাত ১০.৫০ /১০.৫৫ ঘটিকা বিকট শব্দ। বাম পায়ে কিছু একটা আঘাত করল, চারদিক অন্ধকার, মানুষের আর্তনাত, নাকমুখ দিয়ে গ্যাস ঢুকছে, মাথায় আসে এখান থেকে যে করেই হোক বাহির হতে হবে। সাথে থাকা টর্সলাইটের আলোতে জীবন বাঁচানোর তাগিদে দৌড়। কত লোক হাত পা বিচ্ছিন অবস্থায় পরে আছে, সাহায্যের জন্য কাকুতি মিনতি করছে। বিষ খাওয়া লোকের মতো আমার নাক মুখ দিয়ে ফেনা বেড় হচ্ছে। আমি স্বর্থপরের মতো নিজের জীবন নিয়ে বাহিরে আসি। মাথা মুখ জ্বালা পোঁড়া করছে। মাটিতে পরে গেলে দুজন শ্রমিক ভাই ধরে রাস্তায় নিয়ে আসে, মাথা মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়। ওরাই বলে স্যার আপনার বাম পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে, মনে হয় ভেঙ্গে গেছে। তখন খেয়াল করলাম, হু পা টা ভেঙ্গে গেছে। পরে যখন দেখলাম এতো লোকের ম্যত্যু, এতো অঙ্গহানি, এর মাঝে আল্লাহ্ আমাকে অল্পতে রক্ষা করেছে, তখন নিজেকে পৃথীবির সেরা ভাগ্যবান বলে মনে হয়েছে। খুব খারাপ লাগছে তুহিনের জন্য, জীবন বাঁচলেও চিরতরে পঙ্গু। কৃতজ্ঞতা জানাই পুলিশ সুপার মহোদয় সহ অফিসার ইনচার্জ সীতাকুন্ড থানা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত, আইসি ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ি স্যারদের যারা ঘটনা ঘটার পর থেকে সবসময় খোজখবর নিচ্ছেন।
কৃতজ্ঞতা জানাই পুলিশ সুজন, মামুন,বন্ধু মিজান ভাই কে সারারাত পাশে থেকে ৪/৫ টা হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে। কৃতজ্ঞ সাংবাদিক মামুন ভাই, ছোট ভাই রাজু কে, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ঔষধ থেকে খাবার সকল কিছুর ব্যাবস্থা করে যাচ্ছেন। ধন্যবাদ জানাই ব্যাচম্যান তাপস,ইলিয়াছ সহ সকল ব্যাচম্যানদের যারা সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে খোজখবর নিচ্ছে, দ্রুত আরগ্য কামনা করছে। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী যেন দ্রুত সুস্থ্য হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসতে পারি। সময় মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এবং উপর ওয়ালা সহায় না হলে হয়তো আজ মর্গে থাকতাম।
মোতাহের হোসেন কুমিল্লা জেলার বড়ুরা থানার সলকামুড়ি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে।
পুঁজিবাজার রিপোর্ট – নূ/আ/সি/ ৬ জুন , ২০২২।